ঢাকা , শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ , ১০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোন চালের কী গুণ, জেনে নিন

ডেস্ক রিপোর্ট
আপলোড সময় : ১১-০২-২০২৫ ১২:২৮:০৪ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১১-০২-২০২৫ ১২:২৮:০৪ অপরাহ্ন
কোন চালের কী গুণ, জেনে নিন ​ছবি: সংগৃহীত
ভাত খাওয়ার ব্যাপারটা অনেকেই এড়িয়ে যেতে পছন্দ করেন। কারণ বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন ভাত শরীরের ওজনকে বাড়িয়ে দেয়। তবে বেশিরভাগ মানুষই ভাতের মধ্যে সাদা চালের ভাত খাওয়াকেই প্রাধান্য দেন। সাদা চালকে আরও বেশি চকচকে করার জন্য মেশিনে পালিশও করা হয়, যাতে বাজারদর বেশি পাওয়া যায়। বাদামি, লাল, আর কালো চালের উপকারিতা অনেক বেশি সাদা চালের থেকে। জেনে নিন কোন চালের কী গুণ।

লাল চাল
লাল চালে প্রচুর পুষ্টি ও উপকারী উদ্ভিজ্জ যৌগ রয়েছে। এই চালে সাদা চালের তুলনায় বেশি প্রোটিন ও আঁশ থাকে। লাল চালকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের ভান্ডার বলা যায়। কালো চালের মতো লাল চালও ফ্ল্যাভোনয়েড অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ, যার মধ্যে অ্যানথোসায়ানিন, অ্যাপিজেনিন, মাইরিসেটিন ও কোয়েরসেটিন রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, লাল চালের ফ্রি র্যাডিক্যাল প্রতিরোধের ক্ষমতা কালো চালের তুলনায় বেশি এবং এতে ফ্ল্যাভোনয়েড অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের পরিমাণও বেশি। ফ্ল্যাভোনয়েড প্রদাহ কমাতে, ফ্রি র্যাডিক্যালের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং হৃদ্রোগ ও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করতে পারে।

কালো চাল
ইদানীং কালো চাল খাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এই কালো চালকে নিষিদ্ধ চাল বলে। কখনো কখনো বেগুনি চালও বলা হয়। বহু শতাব্দী ধরে এটি চীন, কোরিয়া ও জাপানের মানুষ খাচ্ছেন। এই চালকে ‘নিষিদ্ধ চাল’ বলা হয় কেন জানেন? ধারণা করা হয়, এটি প্রাচীন চীনে রাজপরিবারের জন্য সংরক্ষিত ছিল। এটা সর্বসাধারণের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। তাই এমন নামকরণ। এক গবেষণায় দেখা গেছে, সব ধরনের চালের মধ্যে কালো চালের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সবচেয়ে বেশি। আমাদের শরীরে ফ্রি র্যাডিক্যালস বাড়লে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি হয়। এই অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হৃদ্রোগ, ক্যানসার ও আলঝেইমারের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগ তৈরি করতে পারে। আর এই ফ্রি র্যাডিক্যালস রোধ করে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। কালো চালের বিশেষ উপাদান হলো অ্যানথোসায়ানিন। এই অ্যানথোসায়ানিন ফ্ল্যাভোনয়েডের শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও প্রদাহনাশক গুণ রয়েছে। পাশাপাশি এর ক্যানসার প্রতিরোধের ক্ষমতা আছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যানথোসায়ানিন স্তন ক্যানসারের কোষ বৃদ্ধি দমন করেছে।

বাদামি চাল
বাদামি চাল হোল গ্রেইন বা গোটা শস্যের চাল। এ চালের যেটা খাওয়া যায় না, সেটা হলো ‘হুল’। এই হুল বা বাইরের খোসা ঝরে যায়, থাকে তুষ ও জার্ম বা অঙ্কুর স্তর, যা ধানের বাদামি রঙের গঠন তৈরি করে। এ কারণে বাদামি চালে প্রচুর পুষ্টি থাকে। বাদামি চালে ফ্ল্যাভোনয়েড অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যেমন অ্যাপিজেনিন, কোয়েরসেটিন ও লুটেওলিন থাকে। ফ্ল্যাভোনয়েড–সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খেলে হৃদ্রোগ ও নির্দিষ্ট কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাস পেতে পারে। বাদামি চালের ক্যালরি ও শর্করার পরিমাণ সাদা চালের সমান হলেও এতে কিছুটা বেশি পরিমাণে ফাইবার ও প্রোটিন থাকে। ফাইবার ও প্রোটিন—দুটোই ক্ষুধা ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। এ ছাড়া আঁশ রক্তে শর্করার মাত্রা ও ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা রাখে। ২০২১ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সাদা চালের পরিবর্তে বাদামি চাল খেলে ওজন কমতে পারে। তবে প্রি-ডায়াবেটিস বা টাইপ-২ ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে না।

সাদা চাল
চাল থেকে হাস্ক (আবরণ), ব্র্যান (তুষ) ও জার্ম (অঙ্কুর) সরিয়ে ফেললে সেটা সাদা চাল হয়ে যায়। সাদা চাল মূলত একধরনের পলিশ করা চাল। যদিও এই প্রক্রিয়ায় চাল বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায়, তবু এতে থাকা পুষ্টি উপাদান ও উপকারী উদ্ভিজ্জ যৌগের অনেকাংশই নষ্ট হয়ে যায়। সাদা চালে আঁশ, প্রোটিন এবং নির্দিষ্ট ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের পরিমাণ বাদামি চালের তুলনায় কম। এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের পরিমাণের দিক থেকে বাদামি, কালো, লাল চালের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। অন্যদিকে সাদা চাল সাধারণত বি ভিটামিন এবং আয়রন দিয়ে সমৃদ্ধ করা হয়। তাই কিছু কিছু সাদা চালে বাদামি চালের তুলনায় বেশি পরিমাণে এই পুষ্টি উপাদান থাকে। যদিও সাদা চালের আঁশ ও প্রোটিনের পরিমাণ কিছুটা কম, তবে এটি সুষম খাদ্যের অংশ হিসেবে খেতে পারবেন।

সাদা চালের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) বাদামি চালের তুলনায় বেশি। জিআই বেশি থাকলে এটি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করতে পারে। তবে রান্নার পর সাদা চাল ঠান্ডা করলে এতে ‘রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ’ নামের একটি ফাইবার তৈরি হয়, যা রক্তে শর্করার প্রভাব কমাতে সাহায্য করতে পারে। একটা মজার বিষয় হলো সাদা চালে আর্সেনিকের পরিমাণ অন্যান্য চালের তুলনায় কম।

শেষ কথা
গবেষণায় দেখা গেছে, পরিশোধিত শস্যের তুলনায় গোটা শস্যে (হোল গ্রেইনস) বেশি উপকারিতা রয়েছে। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতিদিন ৫০ গ্রাম সাদা চালের পরিবর্তে একই পরিমাণ বাদামি চাল খেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ১৬ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে। হোল গ্রেইন বা গোটা শস্য হৃদ্রোগ, স্থূলতা এবং কিছু কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে।
হোল গ্রেইন বা গোটা শস্য চালে তুষ ও অঙ্কুর থাকে। অর্থাৎ এতে বেশি ফাইবার, প্রোটিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, নির্দিষ্ট ভিটামিন ও খনিজ থাকে।

তবে সাদা চাল যে খাওয়া যাবে না, ব্যাপারটা তা নয়, এতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান থাকে। সুষম খাদ্যাভ্যাসের অংশ হতে পারে সাদা চাল।

আপনি যে ধরনের চালই বেছে নেন না কেন, সঙ্গে সবজি, প্রোটিন ও ভালো চর্বি রাখুন, যাতে আপনার খাবারটি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ হয়।
সূত্র: হেলথ লাইন

বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এইচ বাশার/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ